কিভাবে আমরা আমাদের শৈশবের আনন্দ গুলো আবার ফিরে পেতে পারি
কেনো আমরা এত কষ্ট করে পড়াশুনা শিখছি?
বিশ্বের অনেক জ্ঞ্যানী লোকজন সবসময় বলে থাকেন যে, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধু একটি, আর তা হল মানুষের চিন্তাভাবনাগুলোকে বিকাশিত করে তার বিশ্বাস গুলোকে উন্নত করা। কিভাবে নিজের চিন্তা চেতনা বিকাশিত করতে হয়, কিভাবেই বা বিশ্বাসগুলো উন্নত হয় এগুলোও শিক্ষারই অংশ। কিন্তু শিক্ষা শুধুমাত্র কোনো প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক হতে পারে এইটাতে বিশ্বাস করা টাও বোকামি। জীবনের বেঁচে থাকার প্রতিটা ক্ষেত্র আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র হতে পারে যদি আমরা সেইভাবে শিক্ষাটাকে নিতে পারি। আরো ভালোভাবে বুঝাতে এই পোস্ট টি ঘুরে আসুন।
জাপানিজদের সফল হওয়ার মতবাদ (Theory Of Japanese)
যেমন ছোট বেলায় বিশ্বাস ছিলো যখন আমরা বড় হব তখন বাবা মা আমাদের সব জিনিস নিয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা দিবেন। ইচ্ছা মত বাহিরে ঘুরতে পারব, একা একা কোথাও যেতে পারব এরকমি কিছু বিশ্বাস ছিল আমার নিজের ক্ষেত্রে এমনকিবেশিরভাগদের ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম হওয়ার কথা না ("ছোটবেলায় ভালো ছিলাম বড় কেন হলাম" এমন টাইপের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো observe করে বললাম)। কিন্তু এরপর বড় হয়ে আমরা কি দেখলাম? যে ছোট বেলার সেই সুখ, শান্তি, আনন্দের জীবনটার মত জীবন আর কোনো সময় আসবেনা। ইক্টু বড় হতে না হতেই মাথায় এত কিছু ঢুকে যায় যে বড় হয়ে যাবার পর ছোট বেলার কথা মনে হলেই বার বার আমাদের শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। কারন ছোট বেলায় আমাদের মস্তিষ্ক এত কিছু জানত না। কেনই বা জানবে? তখনতো জানার ক্ষেত্র অনেক কম। আমাদের যেইটা ভালো লাগতো সেইটা করতে আমাদের মস্তিষ্ক বাধা দিত না অথবা যা করলে মস্তিষ্ক আনন্দ পেয়ে যেত আমরা তাই করতাম বা করতে চাইতাম। এইজন্য অনেক সময় বাবা মা আমাদের বাধা দিতেন। কারণ তারা জানতেন যে তাদের সন্তানরা কতটুকুর থেকে (দুষ্টামি, খেলাধুলা বা কোনো কিছু পাওয়ার জিদ) বেশী করলে তাদের সন্তানদের জন্যই খারাপ হবে। আমরা ভাবতাম যে বড় ভাইয়া বা আপুকে কিছু বলেনা আমার সাথেই যতসব শত্রুতা (যদিও আমার বড় ভাই বা বোন কেউ নাই) তবুও আমার ছোটবেলার বন্ধুদের কাহিনি গুলো এখন মনে করলে বুঝতে পারি। আসলে এইটাও একটা শিক্ষা বলা যেতে পারে যে ছোট বেলায় শিক্ষাটা না থাকায় আমাদের চিন্তা ধারা আর বিশ্বাসে ভুল ছিলো। ইক্টু বড় হয়ে (হাইস্কুল, বা কলেজে ভর্তি হয়ে অনেক বন্ধুদের সাথে মিশে, পড়াশুনা করে বা পারপার্শিক অবস্থা দেখে) শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের চিন্তাধারা টা পালটিয়ে বুঝতে পেরেছি যে ছোটবেলার আনন্দটা আর নাই এবং সেই বিশ্বাসটাও বদলে গেছে যে বড় হয়ে অনেক আনন্দে থাকব স্বাধীন জীবনের ফলে।
মন প্রফুল্লতার জন্য ইন্সটল করুন শ্বাসপ্রশ্বাস এর মেডিটেশন অ্যাপ।
স্টিভ জবসের সেই বিখ্যাত উক্তি "কানেক্টিং দ্যা ডটস" এর কথা এখানে বলা যেতে পারে। কলম দিয়ে দাগ টেনে অনেকদুর যাওয়া যায় (ডট না রেখে দাগ টানা আর কি!)। কিন্তু আমরা কলমদিয়ে দাগ টানার মত জীবনটাও সবসময় ঐভাবে নিয়ে যেতে পারিনা। একটানা বহুদুর চলতে চলতে বেশকিছু ডট থেকে যায় যেইটা পরবর্তি ডটটির সাথে কানেক্ট হয়না। কিন্তু অনেকদূর যেয়ে যখন আমরা পেছনে তাকাই তখন কানেক্ট না হওয়া এই ডট গুলো কানেক্ট হয়ে একটি সুন্দর observation line তৈরি হয়ে যায় এবং আমরা বুঝতে পারি কেন সেখানে বিন্দু গুলো সংযুক্ত হয়েছিলোনা। নিজেদের ভুলগুলোর কারন বুজতে পারি। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গুলোতে আসলেই দেখা যায় যে কেউ হয়ত খুব স্বাধীন জীবন যাপন করছে কিন্তু তার মনে অনেক ডিপ্রেশন। কেউ যদি অনেক বেশী স্বাধীন হয়েও ডিপ্রেসড না হয়ে থাকেন তাইলে জানাইয়েন আমার বিশ্বাস টা পালটাবো। আর যারা নিজেদের থেকেই স্বাধীন না হয়ে তাদের জীবনে একটা বাইন্ডিং তৈরি করে চলেছে তারা ছোটবেলার সেই স্বাধীনতা পাবেনা। ঠু মাছ সিম্পল। ফলে ছোটবেলার সুখো আর আসছেনা। সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে ওইরকম সুখি হতে চাইলে হয় সমাজ আমাদের বাঁধা দিয়ে ডিপ্রেসড করবে নয়ত নিজেরাই বাইন্ডিং এর কারনে সেইটা করতে পারবোনা। কিন্তু এখনো আমরা সেই ছোটবেলার আনন্দটা পেতে পারি। বরং আরো বেশী করে পেতে পারি। কারন এখন বিশ্বাসগুলো আগের তুলনায় অনেক উন্নত। ফিউচারে স্ট্রাগল বা কষ্ট কোন কোন ক্ষেত্রে আসতে পারে আমরা অনেকটাই জানি। কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করিনা। এখন কথা হচ্ছে যে কিভাবে এই দুইটা থেকে মুক্ত হয়ে সেই ছোটবেলার মত আনন্দে ফিরে যাব। ব্যাপারটা খুব সিম্পল। আমাদের যা করতে অনেক ভালো লাগে সেইটা করব সমাজের কোনো পরোয়া না করে। অবশ্যই ভ্যালুয়েবল কিছু কাজ হতে হবে যা করলে নিজের ভালো লাগবে এবং সমাজ বেশি গুতাতে আসবেনা। মেইন কথা নিয়ত ভালো থাকলে আর ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলে সমাজকে ইগ্নোর করা কোনো ফ্যাক্টই না। মেইন কথা আমাদের সুখি হতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তা সুখ জিনিস টা শুধুমাত্র ভালো কাজগুলোর মধ্যেই রেখেছেন। যেমন ছোটবেলায় কাউকে হেল্প করার আগে কখনও চিন্তা আসতো না যে সে আবার আমার হেল্প করতে আসবে তো? বা আমার হেল্প না করলে ওর হেল্প করব কেনো এই চিন্তা গুলো ছোটবেলায় আমাদের কারোরি তেমন ছিলোনা। এই কারনে কেউ কষ্ট দিলেও কোনো আক্ষেপ থাকতোনা। সব ভুলে আবার তার সাথেই মিশে খেলাধুলা করতাম। কেউ আমাদের সাথে ভালোভাবে কথা বললে বা আমাদের প্রশংসা করলে কোনো কিছু না ভেবেই তাদের বিশ্বাস করে নিতাম। পরে সেই বিশ্বাসটা ভেঙে গেলেও অত কষ্ট পেতাম না। কিন্তু আজ সেই বিশ্বাসটাকে আমরা অনেক বড় করে দেখি যে কাউকে বিশ্বাস করে যেন কষ্ট পাওয়া না লাগে তাই অনেক বুঝে শুনে মানুষকে বিশ্বাস করি। তারপরেও সেই বিশ্বাসটা মানুষ ভাঙে। বরং এখন আরো অনেক বেশিই ভাঙে এবং আমরাও বর্গের সমানুপাতিক হারে অনেক বেশী কষ্ট পাই। সে কেনো আমার বিশ্বাস টা ভাঙলো!! দুনিয়ার কোনো মানুষ ভালোনা!!! সবাই আমার সাথে এমন করে!! ব্লা ব্লা ব্লা!!! একজনের বিশ্বাস ভাঙার কারনে পুরো পৃথিবীর মানুষকেই দোষারোপ করে ধুয়ে নামায় দেই। কিন্তু আমরা যদি শুধু এইটুকু বুঝে মেনে নিতাম যে মানুষ বেচে থাকলে সে বদলাবেই। এই বদলানোটা আমরা আটকাতে পারবোনা। কিন্তু আমরা নিজেকে কোনো কিছু থেকে বদলে যাওয়াকে আটকাইতেই পারি। বা ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের দৃষ্টিভঙ্গী টা বদলেও নিতে পারি ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকার জন্য যাতে আমাদের জীবন সুখি হয় এবং কষ্টটাও কমে যায়। স্টিভ জবসের আরেকটি উক্তি ছিলো যে "ক্ষুধার্ত থাকো বোকা থাকো"। এখানে ক্ষুধার্ত বলতে অনেক কিছুর ক্ষুধার কথা বলা যেতে পারে। যেমন জ্ঞ্যানের ক্ষুধা, সম্মানের ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষুধা, ভালোবাসার ক্ষুধা। এসবের ক্ষুধা মানুষের থাকেই কম বেশী। কিন্তু ক্ষুধার্ত থাকার সাথে সাথে আমাদের বোকাও থাকতে হবে সবসময়। নয়ত আমরা ক্ষুধার দাস হয়ে যাব। আমাদের ক্ষুধা মিটবেনা সবকিছু পেলেও আরও কিছু পেতে চাইবো। কিন্তু বোকা থাকলে সেই ক্ষুধা টা পূরন হয়ে যাবে। আমরা আনন্দিত হব। আবার ক্ষুধা লাগাতে হবে বোকা থেকে নাহলে আনন্দের বা সেলফ সেটিস্ফেকশনের এই প্রসেস টা থেমে যাবে। আরেকটা উক্তি যেইটা না বললেই নয় তা হলো "পৃথিবীতে সবাই জিনিয়াস। কিন্তু আপনি যদি একটি মাছকে তার গাছ বেয়ে উঠার সামর্থ্যের উপরবিচার করেন তাহলে সে সারা জীবন নিজেকে শুধু অপদার্থই ভেবে যাবে।"---আইনস্টাইন। এই উক্তি টি তিনি যেই অর্থে বলেছিলেন সেইটা হয়ত আমাদের অনেকেই বুঝিনা। এই উক্তিটি দ্বারা মানুষ একটা জিনিস পারে আর অন্য মানুষ সেটি পারবেনা এইটা বোঝায় না। এইটা দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে যার যেইটা করতে ভালো লাগে বা যে যেইটা করতে পারে ভালো ভাবে আনন্দের সাথে তার সেইটাই করা উচিত। তাকে অন্যটা করতে বাধ্য করলে সে নিজেকে অপদার্থই ভাববে। কিন্তু এইটার মানে এই নয় যে সে ঐ টা পারবেনা।(যদিও মাছ গাছ বেয়ে কখনও উঠতে পারবেনা, এইটা নেহায়েতই প্রতীকী) একটা মানুষ যেইটা পারে, অন্য মানুষের সেইটা করার ইচ্ছা, আগ্রহ থাকলেই সে সেটা করতে পারবে বলে আমি মনে করি। কিন্তু যার একটা কাজে কোনো ইন্টারেস্ট নাই সে ঐটাতে আনন্দ পায়না তাহলে সে কেনো সমাজের আর চার জনের দেখাদেখি ঐ কাজ করবে? কোনো কাজে মেধা তখনই বিকশিত হবে যখন সে ঐটা করে আনন্দ আর স্যাটিস্ফেকশন পাবে। মেধা কখনই জোর করে বা অনুকরন করে, কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়া একটা জিনিসে লেগে থেকে বিকশিত হতে পারেনা। কখনই না। আমার সাইকাইয়াট্রিস্ট আমাকে বলেছিলেন যে আমি এক্সট্রোভার্ট আর ইন্ট্রোভার্ট দুই ধরনের মানুষদের মতই কাজ করতে পারি। এই কারনে মাঝে মধ্যে ডিপ্রেসড হই কিন্তু ডিপ্রেশন কেটে গেলেই আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাই। এরপরে ঐ আনন্দ শেষ হলে আবার ডিপ্রেশন আসে। কথাটা আমার মাথার উপ্রে দিয়ে গিয়েছিলো। মনে করেছিলাম যে এই কি সুপার নেচারাল জিনিস যেইটা আমার হয়। এরপরে একটা ব্লগ পরতে যেয়ে জেনেছিলাম যে শতকরা ৭% মানুষ এমন হয়ে থাকে যারা দুই রকমের পারসোনালিটি বজায় চলতে পারে এইটা ন্যাচারাল জিনিস। কোনো সুপার ন্যাচারাল জিনিস না। আমার একটা বন্ধু আমার ফেইলিয়ার আর কথা বার্তার অসামঞ্জস্যতা দেখে ইক্টু ব্যাংজ্ঞার্তিক ভাষাতেই বলেছিলো যে তুমি মটিভেশনাল স্পিচ দিলেই তো পারো। তাই তার নাম টা না জানিয়ে এই লিখাটি তাকে উতসর্গ করলাম। যদিও এইটা কোনো মটিভেশনাল স্পিচের মত লিখা না। আর মটিভেশনাল কিছু লিখার ন্যুনতম যোগ্যতাও আমার নাই। তবে ফেইলিয়ারের ফেইল করার মটিভেশন বলা যেতেই পারে এটাকে যেটাতে মনটা শৈশবের আনন্দ ফিরে পাবে।
আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।
আরও পড়ুনঃ
https://learnlifestory.blogspot.com/ অনেক সুন্দর কন্টেন্ট ।। খুব ভাল লাগল
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Delete